পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার.
ভূমিকা:
পরিবেশ বলতে মানুষের বসবাসের জন্য উপযুক্ত এলাকাকে বোঝানো হয়। মানুষের চারপাশের আলো, মাটি, পানি, পাহাড়, পর্বত, নদ-নদী, খাল-বিল, বন-জাল, পশু-পাখি এসব মিলিয়েই পরিবেশের সৃষ্টি। এই পরিবেশের সঙ্গে মিলে-মিশে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর বিচিত্র জীবনের বিকাশ ঘটে। প্রাণী জগতের জীবন-যাপনের এই পরিবেশ থেকে সংগৃহীত হয়। আবার সেসব উপকরণ ব্যবহারের পর তার পরিবার অংশ যে পরিবেশেই যায়। পরিবেশ থেকে উপকরণ গ্রহণ ও বর্জনের মধ্যে ভারসাম্য থাকা বাঞ্ছনীয়। আর যদি ভারসাম্য না থাকে সেই সৃষ্টি হয় পরিবেশ দূষণের। জনসংখ্যার অত্যধিক বৃদ্ধি, নগরায়ন, অপরিকল্পিত কলকারখানা প্রতিষ্ঠা, যানবাহনের হলো ধোঁয়া, সুষ্ঠু পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থার অভাব, রাসায়নিক তেজস্ক্রিয়তা, ফসলের ক্ষেতে কীটনাশকের ব্যবহার, |জলাবন্ধতা, মরুকরণ ইত্যাদি কারণে প্রতিনিয়ত পরিবেশ দূষিত হয়ে মানুষ ও প্রাণিজগতের ভবিষ্যৎ এতিত্ব রুমেই বিপন্ন করে তুলছে।
দূষণের কারন:
প্রকৃতির বিরুদ্ধে যখন থেকে মানুষের আগ্রাসন শুরু হল তখন থেকেই পরিবেশ দূষণের সূচনা। বন জঙ্গল কেটে মানুষ ফসল উৎপাদন করছে, গৃহ তোর করছে। এতে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হয়েছে। শিল্প বিপ্লবের ফলে অসংখ্য কলকারখানা সৃষ্টি হয়েছে। এসবের বর্জ্য পরিবেশকে দূষিত করছে। ফসলের উৎপাদনের হল সার, কীটনাশক ইত্যাদি ব্যবহার করে জমির ক্ষতিসাধন করা হচ্ছে। যানবাহনের কাল-ধোয়া থেকে তৈরি হচ্ছে বিষাক্ত গ্যাস। বিবিধ উৎস থেকে বাতাসে ছড়াচ্ছে তেজস্ক্রিয় পদার্থ। মানুষ বাড়ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি ভয়াবহ রূপ লাভ রায় পানি, মাটি ও বাতাসের ওপর চাপ ছে। বহারের শক্তি উৎপাদনের প্রক্রিয়া থেকে উৎপন্ন হচ্ছে হরে রাসায়নিক পদার্থ। আণবিক বোমার তেজস্ক্রিয়া পরিবেশের জন্য দারুণ ক্ষতির কারণ হয়েছে।
দূষণের প্রভাব :
পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হওয়ায় বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে সূর্যের ক্ষতিকর তেজস্ক্রিয় রশ্মি সরাসরি পৃথিবীকে আক্রমণ করছে। ফলে মানব জীবন আক্রান্ত হচ্ছে মারাত্মক ব্যাধিতে। আবার বিশ্ব জুড়ে হা, অনাবৃষ্টি, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, তুষারপাত ও ভূমিধ্বসের সৃষ্টি হয়ে মানব জীবনকে করে তুলছে সংকটাপন্ন। হতাস, পানি ও শব্দ—এই তিন দিক থেকে দূষণের শ্রেণী নির্ণয় করা যায়। বাতাসে জীবের অস্তিত্বের জন্য ক্ষতিকর হেন পদার্থ বেশি হলে তাকে বলা হয় বায়ু দূষণ। এই বায়ু দূষণের প্রধান উৎস হল ধোঁয়া, হুলাবালি, কীটনাশক, তেজস্ক্রিয় পদার্থ প্রভৃতি।
পানি দূষণের বিষয়টিও মারাত্মক। পয়ঃনিষ্কাশন পানি বিনষ্ট করে। কলকারখানার বর্জ্য পদার্থ নদীর পানি দূষিত হয়ে। কীটনাশক পানিতে মিশে পানি দূষণ ঘটাচ্ছে। তেলবাহী জাহাজ থেকে সাগরে তেল ছড়িয়ে পানি বিনষ্ট করে। পানি ভূষণের ফলে মানুষ বিষক্রিয়ায় ভোগে। শব্দ দূষণের উৎস যানবাহনের শব্দ, কলকারখানার শব্দ, গাড়ির হর্ন, মাইকের আওয়াদ, বোমা, ককটেলের বিকট শব্দ ইত্যাদি। প্রতিনিয়ত এসব শব্দ সৃষ্টি হয়ে মানুষের স্নায়বিক বৈকলা ঘটে, দেখা দেয় নিদ্রাহীনতা। শিরঃপীড়া ও মানসিক রোগ এ থেকেই সৃষ্টি হচ্ছে।
দূষণের প্রতিকার :
পরিবেশ দূষণের ভয়াবহ পরিণামের কথা বিবেচনা করে পরিবেশ বিজ্ঞানীরা পরিবেশকে মূল থেকে মুক্ত রাখার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ রোধ করতে হবে। বায়ু দূষণের বেলায় কীট নিধনে জৈব নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ, রাসায়নিক পদার্থের শোধন, ধোঁয়ার পরিশ্রুতিকরণ, বসতি ও শিল্পাঞ্চলের মধ্যে দূরত্ব রক্ষা করা ইত্যাদি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পানি দূষণ রোধের জন্য রাসায়নিক পদার্থ ও ময়লার বিশোধন দরকার। শব্দ দূষণ রোধ করার জন্য শব্দ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ব্যাপক বনায়ন পরিবেশ দূষণ রোধের সহায়ক।
উপসংহার:
বিশ্বে মানুষের অস্তিত্বের স্বার্থে পরিবেশ দূষণ থেকে মুক্ত থাকা দরকার। দেশে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মসূচি ব্যাপকভাবে সম্প্রসারণ করা আবশ্যক। দেশবাসী যদি দূষণের ক্ষতিকর প্রভাবের কথা স্মরণ রেখে নিজেদের স্বার্থে পরিবেশ সুন্দর রাখার চেষ্টা করে তাহলে জাতির যথার্থ কল্যাণ হবে।